স্বাধীনতার পর থেকেই বিদ্যুৎ সঙ্কট বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বেদনাদায়ক সত্য। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার পায়রায় নির্মিত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র – পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই মেগা প্রকল্প বাংলাদেশের শক্তি খাতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র: এক নজরে
-
অবস্থান: পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার পায়রা
-
উৎপাদন ক্ষমতা: ১৩২০ মেগাওয়াট (২ টি ইউনিট)
-
প্রযুক্তি: আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল
-
জ্বালানি: কয়লা
-
প্রকল্প ব্যয়: প্রায় ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার
-
কার্যক্রম শুরু:
-
প্রথম ইউনিট: ১২ জানুয়ারি ২০২০
-
দ্বিতীয় ইউনিট: ২১ মার্চ ২০২২ (আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন)
প্রকল্পের পটভূমি ও গুরুত্ব
২০১৪ সালে, বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড(এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের চায়না মেশিনারিজ কোম্পানি (সিএমসি) এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। উভয় দেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনবে। এছাড়াও, এই প্রকল্প বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের একটি উজ্জ্বল নমুনা।
পরিবেশগত প্রভাব
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাধারণত পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি তৈরি করে। তবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, কেন্দ্রটিতে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ধোঁয়া শোধনাগার এবং ছাই পরিচালনা ব্যবস্থা। সরকার বলছে, পরিবেশের ক্ষতি কমানোর জন্য সকল রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগ। এই প্রকল্প সফল হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
সম্ভাবনা:
-
দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন
-
শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের সুযোগ
-
কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি
-
বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব
চ্যালেঞ্জ:
-
পরিবেশগত ঝুঁকি ও স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতি
-
কয়লা আমদানি নির্ভরতা এবং বৈশ্বিক বাজারের উৎসমায় অস্থিতিশীলতা
-
বড় পরিসরে ছাই পরিচালনার প্রয়োজন এবং সেই ছাই সঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারলে পরিবেশগত ঝুঁকি বৃদ্ধি
-
স্থানীয় মানুষের জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের শক্তি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিতর্কিত পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত সম্ভাবনা এবং ঝুঁকি উভয়ই বিবেচনা করে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশগত ঝুঁকি কমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এবং সাথে সাথে স্থানীয় মানুষের জীবিকার উন্নয়নে আরও বেশি বেশি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র যেন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে সে জন্য সকল পক্ষের সচেতনতা এবং সহযোগিতা প্রয়োজন।
```