প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ভালোবাসা দিবস, যা ভ্যালেন্টাইন'স ডে নামেও পরিচিত। এই দিনটিতে ভালোবাসার মানুষেরা একে অপরকে ফুল, চকোলেট, উপহার এবং ভালোবাসার বার্তা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। কিন্তু এই দিনটির পেছনের ইতিহাস কী? কেনই বা এই দিনটিকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে প্রায় ১৭০০ বছর আগে, তৃতীয় শতাব্দীর রোমান সাম্রাজ্যে।
একজন খ্রিস্টান পাদ্রী এবং চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামের সাথে জড়িয়ে আছে এই দিনটির উৎপত্তি। তখন রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। সম্রাট ক্লডিয়াস ছিলেন একজন কঠোর শাসক যিনি বিশ্বাস করতেন যে বিবাহিত পুরুষেরা ভালো সৈনিক হয় না। তাই তিনি তার সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী যুবকদের বিয়ে নিষিদ্ধ করেন।
সম্রাটের এই আদেশের তীব্র বিরোধিতা করেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিবাহ দিতে থাকেন। সম্রাটের কাছে যখন এই খবর পৌঁছায়, তখন তিনি ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। বন্দী থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইন জেলার কন্যা অ্যাস্টেরিয়াসের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন। বলা হয়, অ্যাস্টেরিয়াস ছিলেন দৃষ্টিহীন। ভ্যালেন্টাইন তার বিশ্বাস এবং ভালোবাসার মাধ্যমে অ্যাস্টেরিয়াসের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনেন।
শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি অ্যাস্টেরিয়াসকে একটি চিঠি লিখেছিলেন যাতে তিনি লিখেছিলেন, "তোমার ভ্যালেন্টাইন"।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর প্রায় দুইশ বছর পর, ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ জেলাসিয়াস ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে "ভ্যালেন্টাইন'স ডে" হিসেবে ঘোষণা করেন।
তবে ভ্যালেন্টাইন'স ডে কেবল সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগের গল্প নয়। এই দিনটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে রোমান ঐতিহ্য এবং লোকাচার। প্রাচীন রোমানরা ১৫ই ফেব্রুয়ারি "লুপারক্যালিয়া" নামে একটি উর্বরতা উৎসব পালন করত। এই উৎসবে একজন ছাগল বলি দেওয়া হতো এবং তার রক্ত দিয়ে যুবক-যুবতীরা একে অপরকে আঘাত করত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এতে তারা আরও উর্বর হবে এবং ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারবে।
কিছু ইতিহাসবিদের মতে, খ্রিস্টানরা পরবর্তীতে "লুপারক্যালিয়া" উৎসবের পৌত্তলিক রীতিনীতিকে খ্রিস্টান ধর্মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন'স ডে হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
মধ্যযুগে, ভালোবাসা এবং রোমান্সের সাথে ভ্যালেন্টাইন'স ডে'র সম্পর্ক আরও ঘনীভূত হয়। বিশ্বাস করা হতো, ১৪ই ফেব্রুয়ারি থেকে পাখিরা তাদের সঙ্গী নির্বাচন শুরু করে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে চতুর্দশ শতাব্দীতে এই দিনটিতে প্রেমপত্র আদান-প্রদান শুরু হয়।
আধুনিক যুগে, ভ্যালেন্টাইন'স ডে একটি বিশ্বব্যাপী উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই দিনটিতে মানুষ তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য নানা রকম উপহার এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ভ্যালেন্টাইন'স ডে'র ইতিহাস যাই হোক না কেন, এই দিনটি আমাদের ভালোবাসা, স্নেহ, এবং মমত্ববোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই বিশেষ দিনে আমাদের প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করা উচিত এবং তাদের জানানো উচিত যে তারা আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
104 টি প্রশ্ন
106 টি উত্তর
2 টি মন্তব্য
2 জন সদস্য